সাইবেরিয়ায়
অবস্থিত মিঠা পানির এক
বিশাল জলরাশি বৈকাল হ্রদ। এই হ্রদটি একাধারে
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন, সবচয়ে গভীর এবং সবচেয়ে
বড় মিঠা পানির হ্রদ।
শীতকালে এই লেকটি সম্পূর্ণ
জমে বরফ হয়ে যায়।
বৈকাল
হ্রদ রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত। ধারণা
করা হয় পৃথিবীর টেকটোনিক
প্লেটের গতিশীলতার কারণে প্রায় আড়াই কোটি বছর
আগে বৈকাল হ্রদের সৃষ্টি হয়েছিল, ফলে এটি বিশ্বের
প্রাচীনতম হ্রদ। বৈকাল হ্রদের দৈর্ঘ্য ৬০০ কিলোমিটার ও
সর্বোচ্চ প্রস্থ প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং
লেকটির আয়তন প্রায় ৩১,৭২২ বর্গ কিলোমিটার।
বৈকাল হ্রদের গড় গভীরতা ২৪৪২
ফুট এবং সর্বাধিক গভীরতা
প্রায় ৫৩৭০ ফুট। গভীরতার
বিচারে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে
গভীরতম হ্রদ। প্রায় ৩০০টিরও অধিক নদীর পানি
বৈকাল হ্রদে পতিত হয় এবং
কেবল মাত্র নিম্ন আঙ্গারা নামের একটি নদীর মাধ্যমে
হ্রদের পানি বাইরে নিষ্কাশিত
হয়। বৈকাল হ্রদকে সাইবেরিয়ার "নীল নয়ন" বা
"সাইবেরিয়ার মুক্তা" বলা হয়। কারণ
সঞ্চিত পানির আয়তন অনুযায়ী এটি
বিশ্বের সব চেয়ে বড়
মিঠা পানির হ্রদ।
এই
হ্রদ শীতপ্রধান এলাকায় অবস্থিত, শীতকালে লেকের তাপমাত্রা থাকে প্রায় -২০ডিগ্রী
সেলসিয়াস এবং গরমকালেও এর
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের
উপরে যায় না। ঋতু
পরিবর্তনের সাথে সাথে বৈকাল
হ্রদের নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে
সম্পূর্ণ লেকটি জমে বরফ হয়ে
যায় এবং এপ্রিল থেকে
জুন মাসের মধ্যে সকল বরফ গলে
যায়। শীতকালে লেকের উপর এত পুরু
বরফের আস্তরণ পরে যে তার
উপর দিয়ে ২ টন
ওজনের গাড়িও অনায়াসে চালানো যায়। অবাক করা
বিষয় হলো প্রায় ৩
ফুট পুরু এই বরফের
আস্তরণ এতটাই স্বচ্ছ যে, তার ভিতর
দিয়ে লেকের তলা পর্যন্ত দেখা
যায়। এই বরফের উপর
দাঁড়ালে মনে হবে যেন
আপনি কোনো বিশাল কাঁচের
উপর দাঁড়িয়ে আছেন। বৈকাল হ্রদের পানি গ্রীষ্মকালেও অত্যন্ত
পরিষ্কার ও স্বচ্ছ অবস্থায়
থাকে। যেকোনো রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে লেকের উপর
থেকে প্রায় ১২০ ফুট গভীর
পর্যন্ত দেখা যায়।
প্রথম
দর্শনে বৈকাল হ্রদকে দেখতে সাগরের মতো দেখায়। বিশালতার
কারণে প্রাচীন চীনা পান্ডুলিপিতে এই
হ্রদকে উত্তর সাগর হিসেবে অভিহিত
করা হয়। বৈকাল হ্রদের
পানির পরিমান প্রায় ২৩০০০ ঘন কিলোমিটার যা
পৃথিবীপৃষ্টের মোট সুপেয় পানির
৫ ভাগের ১ ভাগ। এই
পরিমান পানি পৃথিবীর প্রায়
সমস্ত জনগণ প্রায় ৩০০০
বছর পান করতে পারবে।
বৈকাল হ্রদ এলাকায় প্রায়
দেড় হাজারের বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ
ও প্রাণী আছে। যেসবের ৩
ভাগের ২ ভাগই পৃথিবীর
অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এই
হ্রদের পানি অত্যন্ত অক্সিজেন
সমৃদ্ধ, আর তাই হ্রদের
৫০০০ ফুট গভীরেও জলজ
প্রাণী বাস করতে পারে।
এই লেকে ছোট বড়ো
মিলিয়ে প্রায় ২৭টি দ্বীপ আছে।
তার মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপের নাম
ওলখন দ্বীপ। দ্বীপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২ কিলোমিটার। ১৯৯৬
সালে ইউনেস্কো বৈকাল হ্রদকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী একটি স্থান হিসেবে
ঘোষণা করেছে।
No comments:
Post a Comment