আফ্রিকা
মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ
মৃত আগ্নেয়গিরি এবং এককভাবে দাঁড়িয়ে
থাকা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত। কিলিমানজারো পর্বতের উচ্চতা এতই বেশি যে,
আপনি আফ্রিকা মহাদেশেও এই পর্বতের চূড়ায়
তুষার দেখতে পারবেন।
তানজানিয়ার
উত্তর-পূর্ব দিকে কেনিয়ার সীমান্তের
কাছে কিলিমানজারো পর্বতের অবস্থান। সোয়াহিলি ভাষায় কিলিমানজারো অর্থ উজ্জ্বল পর্বত।
এই মৃত আগ্নেয়গিরির তিনটি
জালা মুখ আছে ,যাদের
মধ্যে সর্বোচ্চ অংশটির নাম কিবো। দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ অংশটির নাম মাওয়েনজি এবং
তুলনামূলক ছোট অংশটির নাম
শিরা। কিবো এবং মাওয়েনজি
শৃঙ্গ দুটি ১১ কিলোমিটার
দুরুত্বে অবস্থিত এবং উভয়ে একটি
খাড়া ঢালের মাধ্যমে যুক্ত। উচ্চতম শৃঙ্গ কিবো সমুদ্রপৃষ্ট থেকে
৪০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
মাওয়েনজি নামের অপর শৃঙ্গটির উচ্চতা
১৬,৮৯৩ ফুট এবং
শিরা নামের চূড়াটি বিলুপ্ত প্রায়। এই আগ্নেয়গিরিতে সর্বশেষ
ভয়াভহ অগ্নুৎপাত ঘটে প্রায় ৩
লক্ষ ৬০ হাজার বছর
আগে এবং সর্বশেষ ২০০
বছর আগে এই আগ্নেয়গিরিটি
সক্রিয় ছিল।
কিলিমানজারো
পর্বতের কিবো জ্বালামুখ আফ্রিকা
মহাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া। ১৮৮৯ সালে জার্মান
ভূ-বিজ্ঞানী হ্যান্স মেয়ার এবং অস্ট্রিয়ার পর্বতারোহী
লুডভিগ পুর্টশেলার সর্বপ্রথম এই পর্বতের শীর্ষে
আরোহন করেন। ৬ থেকে ৯
দিনের পায়ে হাঁটার পথ
পেরিয়ে এর চূড়ায় আরোহন
করতে হয়। এই যাত্রায়
৪টি ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভিজ্জ অঞ্চল অতিক্রম করতে হয়। পৃথিবীর
অন্যতম ঘন জঙ্গলের ভিতর
দিয়ে যাত্রা শুরু করে অতি
উচ্চ মরুভুমি পার হয়ে যাত্রা
শেষ হয় তুষারাবৃত পর্বত
শিখরে। কিলিমানজারোর উপরে গেলে মনে
হবে আপনি যেন অন্য
কোনো গ্রহে চলে এসেছেন। এই
পর্বত বিষুবরেখার কাছাকাছি হলেও এই পর্বতের অধিক
উচ্চতার কারণে কিবোর জ্বালামুখ সবসময় বরফে ঢাকা থাকে।
তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে গত ১০০ বছরে
কিলিমানজারো পর্বতের ৮০ শতাংশ তুষার
গলে গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা আগামী ২০ বছর পর
কিলিমানজারো সম্পূর্ণ তুষারমুক্ত হয়ে যাবে।
পৃথিবীর
সকল মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গগুলো কোনো না কোনো
পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত হলেও আফ্রিকা মহাদেশের
কিলিমানজারো কোনো পর্বতমালার অংশ
নয়। আর তাই কিলিমানজারো
হলো এককভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পৃথিবীর সর্বোচ্চ
পর্বত। সাত মহাদেশের সাত
সর্বোচ্চ পর্বতমালার মধ্যে কিলিমানজারোর অবস্থান চতুর্থ। তবে অন্যান্য সকল
শীর্ষ পর্বত শৃঙ্গর তুলনায় কিলিমানজারোর চূড়ায় আরোহন করা অপেক্ষাকৃত সহজ
কারণ এই পর্বত বিজয়
করতে পর্বত আরোহনের বিশেষ কোনো দক্ষতা না
থাকলেও চলে। তবে কিলিমানজারো
বিজয় অতটা সহজও নয়।
প্রতি বছর প্রায় ৩০
হাজার মানুষ কিলিমানজারো পর্বত আরোহন করতে আসে। এদের
মধ্যে অর্ধেক লোকই এলটিটিউট সিকনেস
(Altitute Sickness) বা
উচ্চতাজনিত অসুস্থতার কারণে শীর্ষে আরোহন না করেই ফিরে
যেতে বাধ্য হয়।
No comments:
Post a Comment