Ads Here

Friday, April 17, 2020

আত্মহত্যাই কি সমাধান


Is Suicide is the Solution


আত্মহত্যা শব্দটার মধ্যেই কেমন যেন একটা বিদ্খুটে ভাব রয়েছে। তবু মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেই নিজেকে হত্যা করে চলছে। কিন্তু এই সকল আত্মহত্যার পিছনে কি আসলে কোন কারণ রয়েছে। যদি কারণ থেকেও থাকে তাহলে কি এই আত্মহত্যার ফলে তাঁর সমাধান হচ্ছে। আমার প্রতি দিনই খবরের কাগজ খুললে অথবা টিভি নিউজে অসংখ্য আত্মহত্যার খবর দেখতে পাই। কিন্তু তাঁর সেই আত্মহত্যার ফলে তাঁর সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে কিনা জানি না। তবে আমার ধারণা মতে, মোটেও কোন সমাধান হচ্ছে না।

এইতো আমাদের এলাকার একটি ছেলে কিছু দিন আগে আত্মহত্যা করলো, কিন্তু বছর খানেক আগে সেই ছেলেটি ভালবেসে বিয়ে করেছিল, একটি ফুটফুটে মেয়েও আছে তাঁর ঘরে। স্ত্রীর সাথে কোন মত বিরোধ ছিল কিনা জানি না, কিন্তু তাঁর স্ত্রীকে কাঁদতে দেখেছি অনেক। তবে তাঁর আত্মহত্যার কারণ কি, তাঁর কারণ গুলোও তাঁর সাথে মরে গেছে। আমাদেরই এলাকার আরও একটি ছেলে, তাঁর ঘরে বউ ছিল, বাচ্চা ছিল, এছাড়া বাবা, মা সবাই ছিল, কিন্তু উপার্জনক্ষম ছিল শুধু সে-ই। সে আত্মহত্যা করছে, হয়তোবা কোন একসময় সে তাঁর পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করতে অপারাগ হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু এই আত্মহত্যার ফলে কি তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। অবশ্যই না, উপরন্তু তাঁর পরিবারকে আরও পথে নামতে হয়েছে তবে কেন এই আত্মহত্যা?? 

আমার নানা বাড়ির এক আত্মীয়ের মেয়ে, বিয়ে হয়েছিল ভালো এক পরিবারেই। কিন্তু ভালো পরিবার আর বেশি দিন ভালো রইল না, যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েকে প্রায়ই মারধর করতো, এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করলো। আর তাঁর বর বিয়ে করলো অন্য একটি মেয়েকে। লাভ কার হোল ?? মাঝখানে বাবা-মা তাদের মেয়েকে হারাল। 

আরও একটি মেয়ের কথা বলছি, মেয়েটি ইডেন কলেজে পড়ত। থাকত আজিমপুরের একটি মেসে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক ছেলের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একসময় ছেলেটি হঠাৎ তাঁকে ছেড়ে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মেয়েটির ভাষ্য ছিল রকম, যে মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমিক নতুন করে সম্পর্ক করেছে, সেই মেয়ের যা আছে, তা সবই আছে তাঁর। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিল। হিসাব করে দেখলে অর্থ ছাড়া আর কোনো কিছুতে তাঁর কমতি নেই। মানুষের জীবনটা কী কেবলই স্বার্থের জন্য? পৃথিবী যদি স্বার্থের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে এমন জীবন তাঁর দরকার নেই।

পত্রিকার নিউজ পড়তে পড়তে একদিন দেখলাম, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর এক সহপাঠী জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। পরে ছেলেটি অস্বীকার করলে মেয়েটি আইনের আশ্রয় নেয়। বিষয়টি তাঁর মা-বাবা ভালো চোখে দেখেনি। তাঁর পরিবার মনে করে, মেয়েটির জন্য তাদের পরিবারের সম্মান-মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। মা-বাবা যখন মেয়েটিকে এড়িয়ে চলতে থাকে, তখন একদিন মেয়েটি আত্মহত্যা করে। যখন মেয়েটি আইনের আশ্রয় নিয়ে মিটফোর্ড আসে, তখন তাঁর মা-বাবা মেয়েটির ওপর বিরক্ত ছিল আবার আত্মহত্যার পর মেয়েটির লাশ যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন সেই মা-বাবা অনেক কান্নাকাটি করে। আরেকটি মেয়ের কথা বলছি, মেয়েটির দেশের বাড়ি বরিশালে। তাঁর বাবা চায়ের দোকানদার। এক গাড়িচালকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়। বছর খানেক পর তাঁর স্বামী নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কোনো কাজ করত না। হঠাৎ ঘরে পরপুরুষ আনার প্রস্তাব দেয়। টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে চাপ দেয়। সত্যি সত্যি একদিন মেয়েটির ঘরে অন্য এক পুরুষকে ঢুকিয়ে দেয় তাঁর স্বামী। সেদিন মেয়েটি সেই পুরুষের সামনে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া হাজারীবাগের এক মেয়ে, বাবা-মায়ের মৃতু্যর পর খালার কাছে থেকে বড় হয়েছিল, যখন তাঁর খালা টাকার জন্য মেয়েটিকে পরপুরুষের সাথে থাকতে বলে তখন মেয়েটি মৃতু্যর পথ বেছে নেয়। 

এমনই হাজারো আত্মহত্যার খবর প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাই, World Health Organization- এর তথ্যমতে, ২০১১ সালে ১৯৬৯৭ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে বাংলাদেশে। এছাড়া Shaheed Sohrawardy Medical College- এর তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। Daily Star-এর Report অনুযায়ী ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল অবধি ৭৩৩৮৯ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে, যার মধ্যে ৩১৮৫৭ জন গলায় ফাসি দিয়ে এবং ৪১৫৩২ জন বিশ পান করে আত্মহত্যা করেছে। মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে, ২০১১ সালের জানুয়ারী থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ২৫৮ জন আত্মহত্যা করেছে, যার মধ্যে ১৫৮ জন নারী আর বাকি ১০০ জন পুরুষ। পরিসংখানে যাই আসুক না কেন, এত গুলো জীবনের কি কোন মূল্য নেই। এতটাই সহজ একটি জীবন, চাইলেই মরে গেলাম আর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

উপরে আমি যত গুলো, কারণ দেখিয়েছি সেগুলো ছাড়াও অনেক মানুষ আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মহত্যা করে। যেমন কোন তারকার মৃতু্যতে নিজেরও মিত্তুর পথ বেছে নেয়ে। এছাড়া, তারকার বিয়ে, আবার, কিছু মানুষ আহ্লাদী হয়েও আত্মহত্যা করে, যেমন একদিন নিউজে দেখলাম স্টার জলসা দেখতে না দেয়াতে এক কিশোরীর আত্মহত্যা। আবার, বাবার কাছে ২০ টাকা চেয়েছিল, বাবা দিতে পারেনি বলে আত্মহত্যা। আরে ভাই, একটা জীবনের মূল্য কি বুঝেন না। শুধু শুধু সবই কেন?? কোন কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া ঠিক না।

পরিবারে অসচ্চলতা থাকতেই পারে, প্রেমিক প্রেমিকাকে বা প্রেমিকা প্রেমিককে ছাড়তেই পারে তাই বলে আত্মহত্যা করতে হবে?? যেই স্বামী যৌতুক চায়, যেই স্বামী টাকার জন্য নিজের বউয়ের ঘরে অন্য পুরুষকে ঢুকিয়ে দিতে পারে সেই স্বামীর ঘর ছেড়ে দিন না। আজ তো নারীরা অনেক এগিয়ে, কোন একটা কাজ করে দিন গুজরান করতে পারবেন। যেই খালা টাকার জন্য তাঁর আপন বোনের মেয়েকে, পরপুরুষের সাথে থাকতে বলে, তেমন ঘর ছেড়ে দিন, মানবাধিকার সংস্থার কাছে আসুন। 

সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে তাঁর সমাধান অবশ্যই আছে, নিজের জীবন দিয়ে কোন কিছুর সমাধান হতে পারে না, জীবনটা অনেক দামী, তাঁর সঠিক দাম দিতে শিখুন।


No comments:

Post a Comment