পৃথিবীর
অপার সৌন্দর্যের এক প্রাকৃতিক বিস্ময়
নায়াগ্রা জলপ্রপাত। পানি প্রবাহের দিক
দিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত পৃথিবীর সব চেয়ে বড়
ঝর্ণা। প্রায় ১০ হাজার বছর
আগে সৃষ্টি হওয়া এই জলপ্রপাত
থেকে প্রতি মিনিটে প্রায় ৪০ লক্ষ ঘন
ফুট পানি পতিত হয়।
প্রতি বছর প্রায় ৩
কোটি লোক এই ঝর্ণাটি
দেখতে আসে।
নায়াগ্রা
জলপ্রপাত মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্টের
নিউ ইয়র্ক এবং কানাডার অন্টারিও
প্রদেশের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সীমানার উপর অবস্থিত। নায়াগ্রা
শব্দটির উৎপত্তি "অঙ্গিয়ারা" শব্দটি থেকে যার অর্থ
হলো জলরাশির বজ্রধ্বনি। এই ঝৰ্ণার জলের
স্রোতের শব্দ এতটাই তীব্র
যে, এখানে অন্য কোনো শব্দ
আপনার কানেই পৌঁছাবে না। এটি আমেরিকা ও
কানাডার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তাই সড়ক, বিমান
এবং রেল প্রায় সকল
উপায়েই নায়াগ্রা পৌঁছানো খুবই সহজ। আমেরিকার
ভূখণ্ড থেকে জলপ্রপাতটি সামনাসামনি
দেখা যায় না , দেখতে
হয় কিছুটা পিছন থেকে। জলপ্রপাতটি
সামনে থেকে সব চেয়ে
ভালোভাবে দেখা যায় কানাডার
অংশ থেকে। তবে নায়াগ্রা নদীতে
নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে ঝর্ণাটি সব চেয়ে বেশি কাছ থেকে দেখা
যায়। মেইড অফ দি
মিস্ট (Maid of the
MIST) নৌকা নামের এক নৌকা পর্যটকদের
এই অপার সৌন্দর্যের সান্নিধ্যে
নিয়ে যায়।
নায়াগ্রা
জলপ্রপাত কোনো একক ঝর্ণা
নয় এটি মূলত তিনটি
জলপ্রপাতের সমষ্টি। এই জলপ্রপাতের ৩
ভাগের ২ ভাগ রয়েছে
আমেরিকায় এবং এক ভাগ
কানাডায়। আমেরিকান অংশের নাম আমেরিকান ফলস
(American Falls) এবং
কানাডার অংশের নাম কানাডিয়ান ফলস
(Canadian Falls)। কানাডার অংশে থাকা সব
চেয়ে বড় জলপ্রপাতটির নাম
হলো হর্সশু ফলস (Horseshoe Falls)। উপর থেকে দেখতে
এর আকৃতি অনেকটা ঘোড়ার ক্ষুরের মতো হওয়ায় এর
এমন নামকরণ করা হয়েছে। ঝর্ণার
এই অংশটি ১৬৭ ফুট উঁচু
এবং ২৬০০ ফুট চওড়া।
এই জলপ্রপাতের প্রায় ৯০ ভাগ পানি
এই হর্সশু ফলস দিয়েই পতিত হয়। এখানকার
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝর্ণাটি হলো আমেরিকায়। এর
উচ্চতা প্রায় ৭০ ফুট এবং
উচ্চতা প্রায় ১৬০০ ফুট। নায়াগ্রা
জলপ্রপাতের সব চেয়ে ছোট
ঝর্ণাটির নাম হলো ব্রাইডাল
ভেইল ফলস (Bridal Veil Falls), যার অবস্থান হলো
আমেরিকায়।
পৃথিবীর
সকল মিঠাপানির প্রায় ২০ ভাগ জমা
রয়েছে একাধিক লেকের সমষ্টি দি গ্রেট লেকস
(The Great Lakes)-এ, আর গ্রেট লেকসের
সিংহভাগ পানি প্রবাহিত হয়
নায়াগ্রা ফলস দিয়ে। নায়াগ্রা
জলপ্রপাতের বিশালতা ও সৌন্দর্যের পাশাপাশি
এর জলের ক্ষিপ্রতা একে
করে তুলেছে ভয়ঙ্কর সুন্দর। গ্রীষ্মকালে এই ঝর্ণা থেকে
প্রতি মিনিটে প্রায় ৬০ লক্ষ ঘন
ফুটের বেশি পানি প্রবাহিত
হয়। বছরে বিভিন্ন সময়ে
এই প্রবাহের তারতম্য ঘটে, তবে নায়াগ্রা
জলপ্রপাতে প্রতি মিনিটে পানি প্রবাহের গড়
পরিমান প্রায় ৪০ লক্ষ ঘন
ফুট। এত বিপুল পরিমান
পানি ঘন্টায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে
পতিত হয়। নায়াগ্রার এই
শক্তিশালী স্রোতকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুত
উৎপাদনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমেরিকার নিউ ইয়র্ক ও
কানাডার অন্টারিওতে সরবরাহ করা হয়।
নায়াগ্রা
জলপ্রপাতের বয়স প্রায় ১০
হাজার বছর। অতীতে নায়াগ্রা
নদীসহ সমগ্র গ্রেট লেকস অঞ্চল বরফে
ঢাকা ছিল। পৃথিবীর তাপমাত্রা
পরিবর্তনের সাথে সাথে এখানকার
বরফ গলতে শুরু করে।
তখন থেকেই নায়াগ্রা নদী , লেক ইরি এবং
লেক অন্টারিও থেকে আসা বিপুল
পরিমান পানির স্রোতে বিশাল এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি
হয়।
বর্তমানে
প্রায় সব দেশ থেকেই
হাজার কোটি পর্যটক এখানে
ভিড় জমায়। এখানে সব থেকে বেশি
লোক সমাগম হয় গ্রীষ্ম ও
বসন্ত কালে কারণ এই
সময়েই ঝর্ণাটির সেরা দৃশ্য উপভোগ
করা যায়। প্রতি বছর
শীতকালে নায়াগ্রা জমে বরফ হয়ে
যায় সেসময় ঝর্ণার কিছু অংশ দিয়ে
সামান্য কিছু জলের স্রোত
জারি থাকে। তবে ১৮৪৮ সালের
মার্চ মাসে নায়াগ্রা জলপ্রপাত
সম্পূর্ণ জমে বরফ হয়ে
গিয়েছিলো। সে বছর প্রায়
৪০ ঘন্টা এই ঝর্ণা থেকে
কোনো পানি পড়েনি।
No comments:
Post a Comment