Ads Here

Tuesday, April 21, 2020

কাশ্মীর সংকট


kashmir pakistan kashmir history kashmir population kashmir beauty kashmir conflict azad kashmir kashmir news kashmir geography kashmir india kashmir lockdown kashmir flag kashmir valley

১৯৪৭ সালে দেশভাগ পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত অধ্যায় কাশ্মীর সমস্যা। কাশ্মীর সমস্যা ভারত কিংবা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সীমারেখা অতিক্রম করে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃস্টি করেছে এই কাশ্মীর সমস্যা। যার ফলে প্রায়ই ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরী হচ্ছে, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বড় চ্যালেঞ্জ। ভারত পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক মনোভাব পারস্পরিক অবিশ্বাস ভূস্বর্গ হিসেবে খ্যাত এই উপত্যকার সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পুলওয়ামা হামলা কাশ্মীর সমস্যাকে জটিল করার পাশাপাশি এক উত্তেজিত যুদ্ধক্ষেত্র তৈরী করেছে ভারত পাকিস্তানের মাঝে। 

kashmir pakistan kashmir history kashmir population kashmir beauty kashmir conflict azad kashmir kashmir news kashmir geography kashmir india kashmir lockdown kashmir flag kashmir valley

kashmir pakistan  kashmir history kashmir population kashmir beauty kashmir conflict azad kashmir kashmir news  kashmir geography kashmir, india kashmir lockdown kashmir flag kashmir valley



কাশ্মীর প্রধানত মধ্য হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। ভারত , পাকিস্তান চীন এই তিনদেশের মধ্যে মূলত কাশ্মীর বিভক্ত। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারত জম্মুর বেশিরভাগ অংশ কাশ্মীর উপত্যকা , লাদাখ শিয়াচেন হিমবাহ নিয়ে প্রায় ৪৩% শাসন করছে। অন্যদিকে আজাদ কাশ্মীর, গিরগিট বালুচিস্তানের উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় ৩৭% নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তান। আর চীনের দখলে রয়েছে এই অঞ্চলের ১৫% জায়গা।  কাশ্মীর উপত্যকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পৃথিবীর ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত। জম্মু অঞ্চলে অনেক হিন্দু মন্দির থাকায় এটি হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান বটে  এছাড়া কাশ্মীর লাদাখ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৌদ্ধ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। 

kashmir pakistan  kashmir history kashmir population kashmir beauty kashmir conflict azad kashmir kashmir news  kashmir geography kashmir, india kashmir lockdown kashmir flag kashmir valley


কাশ্মীর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত, পাকিস্তান কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের মধ্যে আঞ্চলিক যে বিরোধ রয়েছে সেটিই মূলত কাশ্মীর সমস্যা। কাশ্মীর নিয়ে প্রথমবারের মতো ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাক্ষরিত সংযুক্তিকরণ চুক্তির ভিত্তিতে ভারত সম্পূর্ণ জম্মু কাশ্মীর রাজ্য দাবি করে।  পাকিস্তান তখন অধিকাংশ মুসলিম জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে জম্মু কাশ্মীর নিজেদের মধ্যে পেতে চায়। এছাড়া সাকশান উপত্যকা আকসাই দাবি করে চীন। পরবর্তীতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে কাশ্মীর সমস্যা বহুমাত্রিক আকার ধারণ করে। ১৯৬৫   ১৯৯৯ সালে দুই দেশ আবারো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে , এছাড়া দুই দেশ আরো বিভিন্ন ছোট-খাটো যুদ্ধের সম্মুখীন হয়।  সম্প্রতি পুলওয়ামা হামলার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি যার উজ্জ্বলতম উদাহরণ।

কাশ্মীর বিদ্রোহী ভারতের মধ্যে বিরোধের মূল কারণ হলো স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন। কাশ্মীরের গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ১৯৭০ সালের শেষভাগ পর্যন্ত ছিল খুবই সীমিত। ১৯৮৮ সালের মধ্যে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বহু গণতান্ত্রিক সংস্কার বাতিল হলে পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। সেই বছরেই মূলত কাশ্মীরে অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারত শাসিত কাশ্মীরে সক্রিয় রয়েছে, কারণ কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের মদদ  দেয়ার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। প্রায় ভারত পাকিস্তানের মধ্য যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার এটিই  মূল কারণ।

১৯৪৭ সালে ভারতভাগের সময় অন্যতম শর্ত ছিল দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনো একটিতে যোগ দিতে পারবে কিংবা তারা চাইলে রাজ্যকে স্বাধীনও রাখতে পারে। এর প্রেক্ষিতে হায়দরাবাদ গুজরাটের জুনগর এবং জম্মু কাশ্মীর রাজ্য স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলো। এদের মধ্যে হায়দরাবাদ জুনগর ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু তাদের রাজা ছিল মুসলিম। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত চাহিদার প্রেক্ষিতে এই রাজ্য দুটি ভারতের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে সমস্যার সৃস্টি হয়, কাশ্মীরিরা ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু তাদের রাজা ছিল হিন্দু। সেসময় রাজা হরি সিং প্রথমে  কাশ্মীরকে স্বাধীন  হিসেবেই রাখতে চেয়েছিলেন।  ১৯৪৭ সালে দেশভাগ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের শাসক। ১৯৪৭ সালের ২০ অক্টোবর পাকিস্তান সমর্থনে আদিবাসীরা কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে। কাশ্মীরের রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পাশাপাশি ভারতের কাছে সহায়তা চায়। কাশ্মীরকে ভারতের সাথে যুক্ত করা হবে এই শর্তে ভারত কাশ্মীরকে সহায়তা করতে রাজি হয়। সে বছরের ২৫ অক্টোবর হরি সিং কাশ্মীরের ভারত ভক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২৭ অক্টোবর তা ভারতের  গভর্নর জেনারেল কর্তৃক অনুমোদিত হয়।  চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ভারতীয় সেনারা অনুপ্রবেশকারীদের হটিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও এতে যোগ দিলে দু দেশের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। ফলে স্বাধীন হওয়ার প্রথম বছরেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চলে কাশ্মীর যুদ্ধ। যুদ্ধের ফলে কাশ্মীর দু ভাগে ভাগ হয়ে যায় , এক অংশ চলে যায় পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে যার নাম হয় জম্মু কাশ্মীর এবং এক ভাগ চলে যায় পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে যার নাম হয় আজাদ কাশ্মীর।

১৯৪৯ সালে দু দেশের যুদ্ধ বিরতির মধ্যদিয়ে সে যুদ্ধে সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীতে ভারত কাশ্মীর বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করে।  জাতিসংঘ ভারত পাকিস্তানকে তাদের অধিকৃত এলাকা খালি করার প্রস্তাব দেয়। কাশ্মীরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোটেরও প্রস্তাব দেয়। ভারত প্রথমে এই প্রস্তাবে সম্মত হলেও পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে জম্মু কাশ্মীরের নির্বাচিত গণ পরিষদ ভারতের সাথে থাকতে চাইলে ভারত গণভোটের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। যুদ্ধ বিরতির শর্ত হিসেবে কাশ্মীর থেকে উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহার  গণভোটের প্রস্তাব দেয়া হলেও ভারত গণভোটে এবং পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহারে অসম্মত হয়। দুই পক্ষের অনড় অবস্থান কাশ্মীরকে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার দিকে ঠেলে দেয় যা এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে।

১৯৪৭ সালের এই  ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বা কাশ্মীর যুদ্ধ ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ। প্রায় দেড় বছর স্থায়ী এই যুদ্ধে অবশেষে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ভারত  পাকিস্তানের মধ্যে লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর ভারত   পাকিস্তানকে বিভক্ত করা হয়। ভারত কাশ্মীরের ,১৩,০০০ বর্গ কিলোমিটারের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, অন্যদিকে পাকিস্তান ১৩,০০০ বর্গ কিলোমিটারের আজাদ কাশ্মীর গিলগিট বালুচিস্তানের ৭২,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দুটির নিয়ন্ত্রণ পায়।

১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে প্রায় ৪০,০০০ হাজারের মতো পাকিস্তানী সৈন্য স্থানীয় কাশ্মীরিদের ছদ্মবেশে লাইন অফ কন্ট্রোল অতিক্রম করে কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে। সময় ভারতীয় সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করলে আবারো দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়। তাসখন্দ চুক্তির মধ্য দিয়ে তখন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর  করে। এই যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার সেনা নিহত ১৫ হাজারের মতো সেনা আহত হয়।

১৯৯৯ সালে কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারত  পাকিস্তান রাষ্টের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ হয়।  পাকিস্তানী সেনা কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা লাইন অফ কন্ট্রোল অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করে। সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানী ফৌজকে আক্রমণ করলে দুই দেশ যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই মাস যুদ্ধ চলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার  মধ্যস্থতায় ভারত   পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়। তাছাড়া ১৯৮৪ সালের পর থেকে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত   পাকিস্তান শিয়াচেন হিমবাহ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশ কিছু খন্ড যুদ্ধে জড়িয়ে পরে।

১৯৯৯ সালের পরবর্তী এক দশক ভারত   পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা তুলনামূলক কম ছিল। ২০০৯-১০ সালের দিকে দুদেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জোশ--মুহাম্মদ , লস্কর--তৈয়বার মতো বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।  এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো কাশ্মীরে ভারতের সেনাদের উপর হামলা করতে শুরু করে। যার অন্যতম উদাহরণ হলো ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে উরি সামরিক ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা।  এই হামলায় প্রায় ১৮ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়। এই সন্ত্রাসী হামলার পিছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলে ভারত দাবি করে। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রূয়ারির মাঝামাঝি কাশ্মীরের পুলওয়ামা নামক স্থানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ৪২ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারত, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বালকোটে জঙ্গিদের আস্তানায় সার্জিকাল স্ট্রাইক হামলা চালায়।  এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাশাপাশি বিমানের পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। সাম্প্রতিক এই ঘটনায় আবারো যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ।

kashmir pakistan  kashmir history kashmir population kashmir beauty kashmir conflict azad kashmir kashmir news  kashmir geography kashmir, india kashmir lockdown kashmir flag kashmir valley

স্বাধীন হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যে কাশ্মীর প্রশ্নে দুই দেশের মধ্যে যেই বিরোধ তা সময়ের পরিক্রমায় জটিল রূপ লাভ করেছে। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ মানেই দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তায় বড় হুমকি। ভারত ১৯৭৪ পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পরমাণু শক্তিধর হওয়ার পর থেকেই এই দুই দেশের বৈরীতা বিশ্ববাসীকে শংকিত করে তোলে। বিশ্ববাসী নতুন করে আর কোনো পারমানবিক আক্রমণ দেখতে চায় না। 





No comments:

Post a Comment