চীনের
বেইজিং শহরে চালু হয়েছে
নতুন একটি বিমানবন্দর, যার
নাম দাসিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আয়তন হিসেবে নতুন
এই বিমানবন্দরটি ৯৮টি ফুটবল মাঠের
সমান। একক অবকাঠামো হিসেবে
পৃথিবীর সব চেয়ে বড়
বিমান টার্মিনালটিও রয়েছে এখানে।
পৃথিবীর
সব চেয়ে বড় অর্থনীতির
দেশ চীনে জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক বিমান পরিসেবার চাহিদা দিন দিন বেড়েই
চলেছে। এয়ারপোর্ট কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যস্ততম বিমানবন্দর হলো বেইজিং ক্যাপিটাল
ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। প্রতি বছর প্রায় ১০কোটি
মানুষ বেইজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে। বিমানবন্দরটির অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে বিশাল
সম্প্রসারণ কার্যক্রম চালানো হয়, কিন্তু তারপরও
ভবিষ্যতের ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে ২০০৮ সালে
বেইজিং-এ আরো একটি
নতুন বিমানবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা
করা হয়। ইরাকি বংশোদ্ভোত ব্রিটিশ নাগরিক "জাহা হাদীদ " এই
বিমানবন্দরের নকশা করেন। উপর
থেকে বিমানবন্দরটিকে অনেকটা তারা মাছের মতো
দেখায়, তাই নির্মাণ কাজ
চলাকালীন সময়েই বিমানবন্দরটি "স্টারফিশ এয়ারপোর্ট" নামে পরিচিতি পায়।
মাত্র ৫ বছরেরও কম
সময়ে এই বিমানবন্দরটির নির্মাণ
কাজ শেষ হয়।
পিপলস
রিপাবলিক অফ চায়নার ৭০
বছর পূর্তিকে সামনে রেখে ২০১৯ সালের
২৫ সেপ্টেম্বর দাসিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি উদ্বোধন করা হয়। ব্রিটিশ
এয়ারওয়েজের একটি বিমান এই
বিমানবন্দরে প্রথম অবতরণকারী ও প্রথম ছেড়ে
যাওয়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটি পরিচালনা করে। চীনের স্টারফিশ বা দাসিং বিমানবন্দরটি
৭ লক্ষ বর্গ মিটার
যা প্রায় ৯৮টি ফুটবল মাঠের
সমান। তার মধ্যে শুধুমাত্র
টার্মিনাল বিল্ডিংটির আয়তন প্রায় ৩
লক্ষ বর্গ মিটার। নতুন
এই বিমানবন্দরে আছে বিশ্বের সব
চেয়ে বড় টার্মিনাল। এই
টার্মিনালটির নকশা করা হয়েছে
বিশেষ কলামফ্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। টার্মিনালের বিশাল ছাদ তৈরী করা হয়েছে
মাত্র ৬টি অতিকায় কলামের
উপর ভিত্তি করে। এই ছাদ তৈরিতে
ব্যবহার হয়েছে বিশেষ ধরণের ফিল্টার কাচ, এই কাঁচের
ভিতর দিয়ে সূর্যের আলোর
প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। টার্মিনালে
প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য
৭৯টি পথ রয়েছে।
বেইজিং
দাসিং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এ যাতায়াতের জন্য
রাজধানী বেইজিং থেকে নতুন মহাসড়কসহ
বেশ কিছু আধুনিক যোগাযোগ
ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
বিমানবন্দরটির নিচ দিয়ে রয়েছে
দ্রুতগামী ট্রেন ও মেট্রোরেল ব্যবস্থা।
এসব দ্রুতগামী যানবাহন এ চড়ে খুব
সহজে চীনের অন্যান্য প্রদেশ ও অন্যান্য বিমানবন্দরে
যাওয়া যাবে। তাছাড়া বিমানবন্দরে অবস্থানরত যাত্রীদের অবসরযাপন এবং বিনোদনের জন্য
রাখা হয়েছে সকল ধরণের আধুনিক
ব্যবস্থা।
দাসিং
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি নির্মাণ করতে চীন সরকারকে
খরচ করতে হয়েছে প্রায়
সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার।
এই বিমানবন্দর পরিচালনার কাজে প্রায় ৪০
হাজার কর্মচারী নিয়োজিত থাকবে। বিমানবন্দরটিতে বর্তমানে ৪টি রানওয়ে আছে,
ভবিষ্যতে আরো তিনটি নতুন
রানওয়ে বন্দরটিতে যোগ করা হবে।
এই বিমানবন্দরটি পুরোপুরি চালু হলে বছরে
৬ লক্ষাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে। বিমানবন্দর
কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে দাবি করেছে ২০২১
সালে এই বিমানবন্দর বছরে
সাড়ে চার কোটি যাত্রী
সামলাতে পারবে। ২০২৫ সালে যাত্রী
সংখ্যা বেড়ে হবে প্রায়
সাড়ে সাত কোটি এবং
২০৪০ সাল নাগাদ দাসিং বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায়
১০ কোটিরও অধিক যাত্রী যাতায়াত
করতে পারবে। আয়তনের দিক দিয়ে দাসিং
সব চেয়ে বড় বিমানবন্দর
হলেও এখনো পর্যন্ত বিশ্বের
সব চেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর
হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

No comments:
Post a Comment